নিউজ24আওয়ার ডেস্কঃ ভারতের বিপক্ষে পাঁচ রান পেনাল্টি না পাওয়ার হতাশা কাটেনি। এর মধ্যে রোববার দিনের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার হারে বাংলাদেশ-পাকিস্তান রূপ নেয় অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনালে। সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনার প্রাণের উচ্ছ্বাস ড্রেসিংরুমে। তবে স্নায়ুচাপ নিয়ে নামা ম্যাচে আবার নতুন বিতর্ক। আবার সেই ভুল আম্পায়ারিংয়ের শিকার বাংলাদেশ। দারুণ শুরুর পর স্পষ্টত যে সাকিবের ব্যাটে বল লেগেছে, এলবিডাব্ল– হননি। তারপরও টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত গেল পাকিস্তানের পক্ষে। সাকিব আম্পায়ারের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আনতে পারলেন না। বারবার কেন বাংলাদেশই ভুলের বলি? এমন আলোচনায় বুঁদ হয়ে থাকল অ্যাডিলেড। বাজে সিদ্ধান্তে অধিনায়কের বিদায়ে বাংলাদেশের মোমেন্টাম হারানোর শুরু। এরপর বাজে ব্যাটিং, মিস ফিল্ডিং ও তাসকিনের ‘নো’ বলের বিতর্ক মিলিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের হার পাঁচ উইকেটে। তাতেই বিষাদমাখা বিদায়। প্রথমবারের মতো টি ২০ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত গ্রুপে পঞ্চম হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো বাংলাদেশকে। নাজমুল হোসেন শান্তর হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় আট উইকেট মাত্র ১২৭ রান। ১১ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। এই জয়ে ভারতের পর দ্বিতীয় দল হিসাবে পাকিস্তান চলে যায় সেমিফাইনালে। দিনের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে গুঁড়িয়ে গ্রুপসেরা হওয়া ভারত আগামী বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে। বুধবার প্রথম সেমিফাইনালে দেখা হবে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের।
অ্যাডিলেড ওভালে রোববার সকালে ডাচদের বিপক্ষে প্রোটিয়ারা আবারও প্রমাণ করে কেন তাদের চোকার বলা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুদলই আশা নিয়ে টসে যায়। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে। এই ম্যাচে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে সুযোগ পান পেসার ইবাদত হোসেন ও বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।
ব্যাটিংয়ের শুরুও ছিল সম্ভাবনাময়। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের কারণে শেষ দুদিন অনুশীলন করতে না পারা লিটনের ওপরই ছিল সবার চোখ। দুটি সিঙ্গেল ও দারুণ এক ছক্কায় পাকিস্তানের বিপক্ষেও ঝড় তোলার আভাস দিচ্ছিলেন। তাকে আটকানোর জন্য বাবর অফ-সাইডে ফিল্ডারের বাঁধ দেন। তৃতীয় ওভারেই ছন্দে থাকা লিটনের বিদায় হয় সফট ডিসমিসালে (১০)। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে। শুরুর সেই ধাক্কা সামলে দারুণ এক জুটিতে দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন। ভালো অবস্থানে থেকে পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট হারালে চাপে পড়ে যান সাকিবরা। নিজের প্রথম ওভারেই পাকিস্তানকে জোড়া সাফল্য এনে দেন শাদাব খান। ওভারের চতুর্থ বলে রিভার্স সুইপ করে পয়েন্টে ধরা পড়েন সৌম্য। একটি করে ছক্কা-চারে ১৭ বলে ২০ রান করেন। ভাঙে শান্তর সঙ্গে তার ৫২ রানের জুটি। পরের বলেই বাংলাদেশ সেই অবিচারের শিকার। অনেকটা এগিয়ে এসে লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় এলবিডাব্ল– হন সাকিব। পাকিস্তানের জোরালো আবেদনের পর আম্পায়ার আঙুল তোলেন একটু দেরিতে। সাকিব রিভিউ নিতে মোটেও সময় নেননি। রিপ্লেতেও ব্যাট ও বলের স্পর্শের হালকা প্রমাণ মেলে। কিন্তু সিদ্ধান্ত চলে আসে সাকিবের বিপক্ষে। তৃতীয় আম্পায়ার মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। অবাক করা কাণ্ড হলো সাকিব যে পিচ থেকে তিন মিটারের বেশি উঠে আসেন সেটাও বিবেচনায় আনা হয়নি। অধিনায়ক এগিয়ে যান আম্পায়ারের কাছে। তর্কও করেন কিন্তু তখন মাঠের আম্পায়ারেরও কিছু করার নেই। ১১ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান তিন উইকেটে ৭৪। তখন ম্যাচের বিবেচনায় ভালো অবস্থায় ছিল টাইগাররা। যখন বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে ১৫০-১৬০ রানের। তখনই ছন্দপতন।
১৭তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে এসেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন আফ্রিদি। ওই ওভারে মাত্র এক রান দিয়ে তুলে নেন মোসাদ্দেক হোসেন ও নুরুল হাসান সোহানের উইকেট। ১৮তম ওভারে আসে মাত্র দুই রান। ১৯তম ওভারে সাত। এরপর যে বাংলাদেশের রান ১২৭ হয়েছে সেটা শেষ ওভারে ১১ রান হওয়ায়। আফ্রিদি ২২ রানে নেন চার উইকেট।
হতাশার ব্যাটিংয়ের পর ফিল্ডিংয়েও বাংলাদেশের শুরুটা হয় বাজে। প্রথম ওভারেই সুযোগ হাতছাড়া করেন নুরুল হাসান সোহান। তাসকিন আহমেদের দারুণ এক ডেলিভারিতে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে সহজ ক্যাচ যায় কিপারের কাছে। নিদারুণ ব্যর্থতায় গ্লাভসে নিতে পারেননি সোহান। শূন্য রানে জীবন পেয়ে পরের বলে ছক্কা হাঁকান রিজওয়ান। এরপরই সতর্ক হয়ে যায় পাকিস্তান। রান বেশি না নিয়ে উইকেট বাঁচিয়ে এগোতে থাকে। এরপর বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন নাসুম। প্রথমবার সুযোগ পাওয়া ইবাদত এনে দেন দ্বিতীয় উইকেট। ১২ ওভারে তাদের রান তখন ৬৯। লিটন দারুণ থ্রোতে আরও একটি উইকেট এনে দেন। তার আগেই অবশ্য বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে সহজ উইকেট হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। বাড়তি পাঁচ রানও চলে আসে তাতে।
বিতর্ক আর মিস ফিল্ডিং যখন আলোচনায়, ১৬তম ওভারে তাসকিনের আরও একটি বিতর্কিত নো বল এবং সেটাকে মোহাম্মদ হারিস ছক্কায় পরিণত করলে পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় পাকিস্তানের কাছে। হতাশার হারে বিশ্বকাপ শেষ করে আজ দেশের বিমান ধরবেন সাকিবরা। এই হারে আরও একটি শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ পরের টি ২০ বিশ্বকাপে সরাসরি মূলপর্বে খেলতে পারবে তো?
Leave a Reply